মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিস ২০২৩ সালে অর্থাৎ গত এক বছরে ৯২ লক্ষ ৬৩ হাজার ৫৩২ টাকা বিভিন্নখাতে অর্থ আদায় করেছে। একই সময়ে আবেদন (মামলা) নিষ্পত্তি করা হয়েছে মোট ১ হাজার ১৫৪ টি। ২০২৩ সালে আপোষ মিমাংসার মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির হার শতকরা ১০১ ভাগ। যা কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ সংখ্যক আবেদন নিষ্পত্তির রেকর্ড।
কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ সাজ্জাতুন নেছা লিপি এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, এক বছরে কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে মোট আবেদন এসেছে ১ হাজার ৩৪৯ টি। তারমধ্যে, এডিআর (Alternative Dispute Regulation) এর আবেদন করা হয়েছে ১ হাজার ৭২ টি। আদালত থেকে মামলা এসেছে ২৭৭ টি। এসব আবেদন ও মামলার মধ্যে মহিলা কর্তৃক আবেদন করা হয়েছে ১হাজার ৭৫ টি এবং পুরুষ কর্তৃক আবেদন করা হয়েছে ২৭৪ টি। এরমধ্যে, কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিস থেকে ২৭৭ টি মামলায় প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে নিষ্পত্তি করা ১ হাজার ১৫৪ টি আবেদন ও মামলার মধ্যে এডিআর মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ১ হাজার ৮৪ টি আবেদন, লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে দায়ের করা মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৪৪ টি এবং আদালত থেকে আসা পোস্ট কেইস নিষ্পত্তি করা হয়েছে ২৬ টি। কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার সাজ্জাতুন নেছা লিপি আরো জানান, জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির সভাপতি ও কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা মুনসী আব্দুল মজিদের নির্দেশনায় জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের কার্যক্রমকে ক্রমাগত গতিশীল ও জনবান্ধব করা হচ্ছে। ফলে এ বিশাল অর্জন সম্ভব হয়েছে। জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালন উপলক্ষে গত ২৮ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের সাফল্যের এ পরিসংখ্যান জেনে ভূয়সী প্রশংসা করেন।
কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের প্রধান সহকারী হাসান ইমতিয়াজ জানান, গত এক বছরে লিগ্যাল অফিসের উদ্যোগে আপোষ মিমাংসার মাধ্যমে ৯২ লক্ষ ৬৩ হাজার ৫৩২ টাকা আদায় করা হয়েছে। আদায়কৃত অর্থের মধ্যে মোহরানার অর্থ, ক্ষতিপূরণের অর্থ, চিকিৎসা খরচ, জমি জমার অর্থ, বিদেশে নেওয়ার জন্য দেওয়া অর্থ ফেরত নেওয়া, সন্তান ও স্ত্রীর ভরনপোষণের অর্থ সহ আরো বিভিন্ন খাতের অর্থ রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার সাজ্জাতুন নেছা লিপি বলেন, লিগ্যাল এইড এর মূল উদ্দেশ্য হলো, বিরোধীয় বিষয় নিয়ে মামলা দায়ের না করে বিকল্প পন্থায় আপোষ মিমাংসার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা করা। তাঁর মতে, সরকারের বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগের ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে লিগ্যাল এইড এর মাধ্যমে বিরোধীপূর্ণ বিষয় আপোষ মিমাংসা করার আগ্রহ ও প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিন দিন সেবা গ্রহীতার সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য ২০২১ সালে কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে বিরোধ নিয়ে আবেদন এসেছিল ৮৫৭ টি, ২০২২ সালে আবেদন এসেছিল ১ হাজার ৪৭ টি। আর ২০২৩ সালে আবেদন এসেছে ১ হাজার ৩৪৯ টি। তিনি আরো বলেন, জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির সভাপতি ও কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা মুনসী আব্দুল মজিদের নেতৃত্বে, বিচারক, আইনজীবী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর ও সংস্থা, জনপ্রতিনিধি, সেবাপ্রার্থী সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে কক্সবাজারের লিগ্যাল এইড কার্যক্রমকে একটা মডেল লিগ্যাল এইড কার্যক্রম হিসাবে গড়ে তুলতে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাচ্ছি। যাতে সরকারের লিগ্যাল এইড কার্যক্রম এর সুফল অতি সহজে সকলের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেওয়া যায়।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ছিদ্দিকী বলেন, কক্সবাজারে লিগ্যাল এইড এর কার্যক্রম গতিশীল থাকায় নিয়মিত আদালতে মামলার জট কিছুটা হলেও কমছে। লিগ্যাল এইড অফিসে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপোষ মিমাংসার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগও কমছে। বিচারপ্রার্থীরা মামলা চালানোর অর্থ ও দীর্ঘসুত্রীতার বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে সেবাপ্রার্থী নাগরিকদের সুবিধার জন্য সিটিজেন চার্টার প্রদর্শন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, মাতৃদুগ্ধ কর্ণার, ওয়েটিং চেয়ারের ব্যবস্থা, টিভি মনিটরে লিগ্যাল এইড বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, পৃথক মিডিয়েশন রুম, নাগরিকদের ধারণা লিপিবদ্ধ করতে লিগ্যাল এইড রেজিস্ট্রার, পরামর্শ বক্স স্থাপন ইত্যাদি কক্সবাজার লিগ্যাল এইড অফিসকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে এবং সেবার মান বাড়িয়েছে। সরকারের উদ্যোগে বিনামূল্যে আইনী সেবা পাওয়ার বিষয়টি অবস্থাপন্ন পরিবারের লোকজন অবহিত হতে পারছে।
কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির বর্ষ সেরা প্যানেল আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ বলেন, কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি কার্যক্রম খুবই গণমূখী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝেও এর প্রভাব ফেলেছে। তবে কক্সবাজারের লিগ্যাল এইড কার্যক্রমকে আরো অধিকতর গতিশীল করতে হলে প্রয়োজনীয় জনবল সাপোর্ট দিতে হবে। বিশেষ করে লিগ্যাল এইড অফিসে বেঞ্চ সহকারী, হিসাব সহকারী, অফিস সহায়ক নিয়োগ দিতে হবে। রেকর্ড রুম, ওয়েটিং রুম সহ প্রয়োজনীয় রুমের ব্যবস্থা করা দরকার। অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদের মতে, ইউনিয়ন, উপজেলা পরিদর্শন, প্রান্তিক পর্যায়ে গণশুনানি, উঠান বৈঠক, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাতায়াত, ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে প্রয়োজনীয় ট্রান্সপোর্ট সুবিধা দেওয়া দরকার।